সাজিদুল ইসলাম সাজিদ : পরপর শিক্ষকদের নিয়ে দুটি ঘটনা আমাদের রাষ্ট্রের বুকে হয়তো চিড় ধরাতে পারেনি কিন্তু শিক্ষকসহ সুধি সমাজকে করেছে মর্মাহত।
শিক্ষা নাকি জাতির মেরুদন্ড তাহলে শিক্ষকরা হলেন মাথার তাজ।
ছোট বেলা থেকে শুনে এসেছি মা-বাবার পরেই নাকি শিক্ষকদের অবস্থান। তাহলে এ দেশে শিক্ষকদের এই অবস্থান কেন..?
শিক্ষকদের মতো এতো অবহেলিত লাঞ্ছিত মানুষ মনে হয় এই দেশে নেই!! স্বল্প বেতনে চাকরি তারপর আবার প্রশাসন ও পরিচালনা কমিটির হুমকি-ধমকিতে চলতে হয় প্রতিনিয়ত। নড়াইলের শিক্ষক স্বপন কুমারের ভুলটা কোথায় ছিল..? একজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এসেছে।
তিনি সেই শিক্ষার্থী কে উনার অফিসে আশ্রয় দিয়েছেন।
সেটা কি উনার ভুল ছিল.? উনি যদি শিক্ষার্থীকে অফিসের বাহিরে হাজারো মানুষের হাতে তুলে দিতেন।
তাহলে কি ভালো হতো..?
হয়তো তখন যে অবস্থা ছিলো হাজারো মানুষের হাতে তুলে দিলে তারা সেই শিক্ষার্থীকে মেরে ফেলত!
তাহলে কি সমাধান হয়ে যেত!! কিন্তু না তিনি তা করেন নাই। সত্যিকারের অভিভাবকের কাজ করেছেন।
তিনি সেই শিক্ষার্থীর বাবা এবং কলেজের পরিচালনা পর্ষদের লোকদের এবং প্রশাসন সহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেছেন সুন্দর সমাধানের উদ্দেশ্যে।
সেই শিক্ষার্থীকে তিনি পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন তাই হয়তো উনাকে জুতার মালা পরিধান করতে হয়েছে..!!
কিন্তু স্বপন কুমার কে যখন জুতার মালা পড়ানো হয় তখন প্রশাসন সহ পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
এই লজ্জা কি শুধু শিক্ষক স্বপন কুমারের..?
অন্যদিকে সাভারের শিক্ষক উৎপল কুমার বিশ্বাসের ভাগ্য আরো করুন এবং ভয়াবহ। নিজ স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র প্রকাশ্য দিবালোকে স্ট্যাম্প দ্বারা এমন প্রহার করেছে যে তিনি জায়গায় মৃত্যুবরণ করেন।
উৎপল কুমার বিশ্বাসের দোষ ছিল বখাটে ছেলেটা মেয়েদের ডিস্টার্ব করত তিনি তা প্রতিবাদ করেছেন।
তাই বলে একজন শিক্ষককে মেরে ফেলতে হবে..!!
আমরা কেমন সাহসী একজন বখাটে ছাত্র রাস্তায় শিক্ষককে আঘাত করছে কিন্তু কেউ বাধা দেয় নাই বরংচ সে বুক উঁচিয়ে পালিয়ে গেছে।
আচ্ছা যে ছাত্র তার শিক্ষককে হত্যা করতে পারে তার কাছে কিভাবে তার মা-বাবা পরিবার নিরাপদ!
কিন্তু তারা নিজের ছেলেকে লুকিয়ে আড়াল করে রাখার চেষ্টা করলেন। সমাজের কী বেহাল অবস্থা যার ফলে আজ এই দুরবস্থা দাঁড়িয়েছে।
ঘুনে ধরা সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা কে মনে হচ্ছে ছারপোকা খেয়ে ফেলে দিচ্ছে। সাভারের ওই ঘটনায় যেভাবে মা বাবা তার ছেলেকে আড়াল করে রাখার চেষ্টা করেছেন ঠিক তেমনটাই করেছেন নড়াইলের প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তা।
আরেকটু চিন্তা করেন তো এখানে দুই জন শিক্ষকই হিন্দু তাদের মধ্যে যদি একজন মুসলমান হতেন তাহলে কি এই অবস্থার সম্মুখীন হতে হতো? তাই বুকভরা কষ্ট নিয়ে বলতেই হয় সাভারের শিক্ষক উত্তম কুমার হয়তো মরে গিয়ে বেঁচে গেছেন কিন্তু নড়াইলের স্বপনকুমার নাকি বেঁচে গিয়ে ফেঁসে গেছেন..!! তার নাকি পালিয়ে বাসা পরিবর্তন করে বেঁচে থাকতে হচ্ছে।